নিজস্ব প্রতিনিধি:
বেড়ে ওঠা কৃষক পরিবারে। প্রাথমিকের গন্ডি পেরোতে দেইনি দারিদ্রতা। ছোট থেকে বাবার সাথে অন্যের জমিতে কাজ করে অর্থ উপার্জন শুরু। শারীরিক দুর্বলতার কারনে কৃষি কাজও খুব একটা পেরে উঠতেন না। শখের বসেই নিজ গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ের বিয়ের ঘটকালী করেন তিনি। উৎকোচ হিসেবে উভয় পরিবারের কাছ থেকে পেয়েছিলেন লুঙ্গি, গামছা ও ২ হাজার টাকা। এরপর এক এক করে আরও কয়েকটা বিয়ের ঘটকালী করেন। পরিচিতি বাড়তে থাকে। গত ৫ বছরে দিয়েছেন দেড়শতাধিক বিয়ে। বলছিলাম মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের রবগুল ঘটকের কথা। পুরো নাম রবগুল হোসেন। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে রবগুল ৪ নাম্বার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ও ২ সন্তানের জনক। এ পর্যন্ত বিয়ে দিয়েছেন ১৫২টি। এখন তিনি পুরোদস্তর পেশাদার ঘটক। মেহেরপুর জেলাতো বটেই, তার নাম ছড়িয়েছে পাশ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গাতেও। রবগুলের টার্গেট ৫শ বিয়ে দেওয়া। নিজে লেখাপড়া না জানার কারনে রেখেছেন একজন সহকারীকেও।
রবগুল ঘটক বলেন, ৫ ভাই-বোনের মধ্যে আমি শারীরীকভাবে দুর্বল। কৃষক পরিবারে জন্ম নিলেও কৃষি কাজ খুব একটা করতে পারতাম না। ২০১৫ সালের দিকে প্রথম নিজ গ্রামের এক মেয়ের সাথে পাশ্ববর্তী চকশ্যামনগর গ্রামের এক ছেলে বিয়ের মধ্যস্ততা করি। পরো মাসে রাজাপুর গ্রামে একই দিনে দুইটা বিয়ের ঘটকালী করি। সেখানে কিছু টাকা ও পোশাক পাই। পরে নিজের স্ত্রীর সাথে আলোচনা করে পেশাদার ঘটকের খাতায় নাম লিখি। এ পর্যন্ত ১৫২টি বিয়ের ঘটকালী করেছি। আল্লাহর রহমতে এখনো পর্যন্ত সব গুলোই টিকে আছে।
কিভাবে উভয়পক্ষের মধ্যে মধ্যস্ততা করেন জানতে চাইলে রবগুল হোসেন জানান, মোবাইলের মাধ্যমে ছেলে অথবা মেয়ে পক্ষের লোকজন আমার সাথে যোগাযোগ করে। তাদের পছন্দ কেমন পাত্র বা পাত্রী সেটা আমাকে বলে। সেই সাথে তাদের ছবি ও ঠিকানা আমার সহকারী জালাল সেগুলো লিখে রাখে। এখন স্মার্ট ফোন কিনেছি। সব তথ্য সেখানেই জমা করে রাখি। কোন পাত্র-পাত্রীর পছন্দের সাথে মিলে গেলে, তাদের মধ্যে সামনা সামনি মতবিনিময় হয়। পরের কাজটা করে উভয় পরিবার। মাঝখান থেকে আমি কিছু উপহার পাই। তবে বর্তমানে বিয়ে প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা নিয়ে থাকি। যদি দরিদ্র কোন পরিবারের মেয়ে হয় সেক্ষেত্রে শুধু ছেলে পক্ষের কাছ থেকে নিই। ৩৮ বছরের রবগুল ঘটক আরও বলেন, আমি ৫শ বিয়ে দিয়ে অবসর নিতে চাই। তারপর যদি বেচে থাকি গ্রামে কোন ব্যবসা করবো।
সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের কাজী হাবিুবর রহমান বলেন, সরল মনা রবগুল ঘটক অনেক জনপ্রিয় মানুষ। তার তোতলানো কথা ও সরলতা সবার মন জয় করে নেই। তার সততা ও ভালো মানসিকতার জন্যই মানুষ তার কাছে আসে।
রবগুল ঘটকের চাচাতো ভাই শাহনেওয়াজ সোহান বলেন, প্রথম দিকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে তাকে। পরিবারও বিষয়টিকে শুরুতে মেনে নিতে পারিনি। তবে এখন সবার প্রিয় মুখ রবগুল ঘটক। আমরা সবাই তাকে সাপোর্ট করি। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে অনেক মানুষ আসে তার বাড়িতে বিয়ের জন্য।
রবগুলের বিতা পালু হোসেন বলেন, রবগুলের শারীরিক গঠন অন্য স্বাভাবিক মানুষের মত না। ছোট থেকেই বেশ হালকা পাতলা গড়নের। মানুষ তাকে নিয়ে এক সময় হাসাহাসি করতো। কিন্তু এখন সে অনেকেরই প্রিয় মানুষ। এটা আমার কাছে ভালো লাগে। তার পেশাকে আমি সম্মান করি। সততার সাথে মানুষের মন জয় করে সে যেন এগিয়ে যেতে পারে সে দোয়া করি সব সময়।