মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে:
শিক্ষার নতুন দিগন্ত তৈরি হচ্ছে মুজিবনগর তথা মেহেরপুরে। মেহেরপুরে ‘মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে। গত ১০ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি বিলটি সংসদে উপস্থাপন করেন। পরে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সেগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ফলে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নে আরও একধাপ এগিয়ে গেলো।
এর আগে ২০২২ সালের ২৮ মার্চ ‘মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেরপুর আইন, ২০২২’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানাগেছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় আইনের মতো এটা। আইনে ৩৬টি ধারা আছে। রাষ্ট্রপতি আচার্য হবেন। তিনি চার বছরের জন্য স্বনামধন্য একজন শিক্ষককে উপাচার্য নিয়োগ দেবেন। তবে পর পর দুবারের বেশি কেউ উপাচার্য থাকতে পারবেন না। একইভাবে রাষ্ট্রপতি দুজন উপ-উপাচার্য দেবেন, তারাও দুবারের বেশি থাকতে পারবেন না। কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর, একজন দুবারের বেশি থাকতে পারবেন না। রেজিস্ট্রার থাকবেন, সিন্ডিকেট থাকবে। একাডেমিক কাউন্সিল থাকবে, তারা সব দেখবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনবোধে আচার্যের অনুমোদন নিয়ে স্নাতকদের উদ্যোক্তা রূপে বিকাশ করার জন্য তাদের কারিগরি ও অন্যান্য সহায়তা দিতে অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিজনেস ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করবে।
সংসদে উত্থাপিত বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা, বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের সুযোগ সৃষ্টি এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় নির্মান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়ায় বেশ খুশি মেহেরপুরের শিক্ষানুরাগী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। শিক্ষায় তুলনা মূলক পিছিয়ে থাকা মেহেরপুরকে এগিয়ে নিতে বেশ বড় ভূমিকা পালন করবে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করে বর্তমানে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা করেন আরিফুল ইসলাম। তিনি মেহেরপুর সরদ উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় নির্মান সম্পর্কে অনুভুতি ব্যক্ত করে আরিফুল ইসলাম বলেন, স্বাধিনতার দির্ঘ সময় পরে হলেও মুজিবনগরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে এটা আরও আগে হওয়ার দরকার ছিল। মেহেরপুরের শিক্ষাখাতে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়টি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখবে। উচ্চ শিক্ষার জন্য আর বাইরে যেতে হবে না। বাইরের জেলায় পড়াশুনা করা ব্যয়বহুল। সেক্ষেত্রে দরিদ্র মেধাবি শিক্ষার্থীদের জন্য মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় একটি আর্শিবাদ হয়ে উঠবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপঃ (অব) আব্দুল মালেক বলেন, বাংলাদেশ মানেই মুজিবনগর। এটা স্বাধিনতার সুতিকাগার। মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় হবে এটা শুনে খুব ভালো লাগছে। আর্থসামাজিক ও শিক্ষায় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখবে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
মেহেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন জানান, জাতির জনকের নামে নাম মুজিবনগরে একটি “মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়” হবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। মেহেরপুর ১ আসনের সাংসদ ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন নিজেই একজন শিক্ষক। শিক্ষাখাতে মেহেরপুরকে এগিয়ে নিতে নিতে নানা উদ্যোগ গ্রহন করছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কাগজ-কলম থেকে বাস্তবে রুপ নিতে যাচ্ছে।