ডেস্ক রিপোটঃ
শান্তির নীড় বলতে নিজের ঘরকে বোঝায়। সেই ঘর যদি হয় টিন-কাঠের তৈরি তাহলে তো কথাই নেই। টিনের চালে শরতের বৃষ্টির ফোঁটার রিমঝিম শব্দে মনে জাগে অন্যরকম শিহরণ।
টিন-কাঠের এ বাড়ি মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্য। এ জেলার আদি নাম বিক্রমপুর। সৌখিন কিংবা নিম্নবিত্ত- এ অঞ্চলের অধিকাংশ বাড়ি টিন-কাঠ দিয়েই তৈরি। বন্যা কবলিত অঞ্চল হওয়ায় ঘর স্থানান্তরের সুবিধার জন্য এসব উপকরণই বেশি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া পুরাতন ঘর বিক্রি করলেও খরচের প্রায় সমপরিমাণ মূল্য পাওয়া যায়। এতে ক্রেতা-বিক্রেতারাও লাভবান হন।
জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জে প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। তারা যে কতটা শৌখিন- তা টিন-কাঠের তৈরি দৃষ্টিনন্দন ঘরগুলো দেখলেই বোঝা যায়। কয়েক বছর ধরে মুন্সীগঞ্জ সদর, টঙ্গীবাড়ি, সিরাজদিখান ও লৌহজং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন নতুন দোচালা, তিনচালা, চৌচালা ও সাতচালা ঘর। এর মধ্যে শুধুমাত্র লৌহজং উপজেলাতেই প্রতি মাসে ১০০-১৫০টি নতুন ঘর নির্মিত হয়ে থাকে।
নকশা, কাঠের ধরন ও আকার ভেদে ঘরের দাম ২ লাখ থেকে ৩০ লাখ পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঘরগুলো তৈরি করার জন্য মিস্ত্রিরা আসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। অনেকে মিস্ত্রি ঘর তৈরিতে সুবিধার জন্য ৪-৫ বছর ধরে মুন্সিগঞ্জেই বসবাস করছে। প্রকারভেদে ঘরগুলো তৈরিতে তাদের মজুরি হয় ৩৫-৬০ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- ঘর তৈরিতে বাচালু, নাইজেরিয়া, শাল, সেগুন, ওকান ও লোহা জাতীয় কাঠ এবং উন্নত মানের ‘অরজিনাল প্লেন শিট ও ঢেউটিন’ ব্যবহার করা হয়। ঘরগুলো তৈরির জন্য কাঠ আনা হয় চট্টগ্রাম থেকে।
স্থানীয় এক ঘর ব্যবসায়ী বলেন, লৌহজং উপজেলার সবচেয়ে বড় কাঠের ঘরের হাট ঘোড়দৌড় কাঠপট্টি। এখানে শত বছর ধরে ঘর বিক্রি হচ্ছে। আমাদের বাবা-দাদারা এ হাটেই ঘরের ব্যবসা করতেন। এখন আমরা করি। লৌহজংয়ে শতাধিক কাঠের দোকান আছে। অনেকে এসব দোকান থেকে কাঠ কিনে নিজেদের মতো ঘর তৈরি করেন, আবার অনেকে আমাদের তৈরি ঘর কিনে নিয়ে যান।
ঘর ব্যবসায়ী আব্দুর রব ব্যাপারী বলেন, ঘোড়দৌড় কাঠপট্টি নামে পরিচিত আমাদের ঐতিহ্যবাসী এ কাঠের ঘরের হাট সারাবছর চলে। এখানে সব ধরনের কাঠের ঘর পাওয়া যায়। আমরা মাসে শতাধিক ঘর বিক্রি করি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের তৈরি কাঠের ঘর কিনতে ভিড় করে মানুষ।
লৌহজংয়ের উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা আমাদের কে বলেন- এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঘর একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেতা হবে। ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঘর নির্মাণের পরিবেশ ও পারিপার্শিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।