মেহেরপুর প্রতিনিধি:
তীব্র তাপদাহ কমলেও বেড়েছে ভ্যাপসা গরম। গরম আর রোদের চোখ রাঙানি উপক্ষে করে মুজিবনগরে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। দিনের শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত লোকে লোকারন্য মুজিবনগর কমপ্লেক্স। ঈদের তৃতীয় দিনে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে ইদের দিন ও দ্বিতীয় দিনের চেয়ে বেশি। স্বাধীনতার সূতিকাগার মেহেরপুরের মুজিবনগর বিনোদন পিয়াসুদের আকর্ষণের অন্যতম জায়গা ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্স। যেখানে দাঁড়িয়ে একনজরে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরভিত্তিক বাংলাদেশটাকে দেখা যায়। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে একদিনের জন্য হলেও বিনোদনের প্রত্যাশায় বাস-ট্রাক, মোটর সাইকেল, নছিমন, করিমন, আলমসাধুযোগে ও ব্যাক্তিগত কার ও মটরসাইকেল যোগে মুজিবনগরে ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুরা। স্থানীয় দর্শনার্থী ছাড়াও মাইক, ব্যান্ড ও ভেঁপু বাজিয়ে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার-হাজার মানুষের ভিড় জমেছে মুজিবনগরে। ভ্রমণ পিপাসু এসব মানুষের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে মুজিবনগর কমপ্লেক্স। করোনার খরা কাটিয়ে উঠে মুজিবর যেন সেজেছে আপন মহিমায়।
মুজিবনগরে বিশাল আ¤্রকানন ও পার্শ্ববর্তী এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরভিত্তিক বাংলাদেশের মানচিত্র, স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন মূর্যাল, সরকারি শিশু পরিবার, ছয়স্তর বিশিষ্ট গোলাপ বাগান, শাপলা চত্বরসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা।
তবে দির্ঘদিন ধরে মুজিবনগেরর নতুন কোন পরিবর্তন না থাকায় কেউ কেউ আপসোস প্রকাশ করেছে। আবার রাস্তায় সব ধরনের গাড়ি আটকিয়ে তোলা হচ্ছে চাদা এটা নিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে খোভের সৃষ্টি হয়েছে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা শহরের কাপড় ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, বিনোদনের জন্য স্ব-পরিবারে এখানে ঘুরতে এসেছি। সন্তানদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সেক্টরভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে পারছি। তাই খুব ভালো লাগছে। তবে গত ১০-১২ বছরে নতুন কিছু মুজিবনগরে তৈরি হয়নি এটা খুব হতাশার। এছাড়াও সরকারি জায়গায় ভ্রমন করতে দিুই জায়গায় দিতে হলো চাঁদা।
জহিরুল ইসলামের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন মেহেরপুর ১ আসনের সাংসদ ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তিনি জানান, আন্তর্জাতিকমানের মুক্তিযুদ্ধভিত্তীক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে মুজিবনগরকে গড়ে তোলার জন্য ত্রিমাত্রিক নকশা করা হয়েছে ইতিমধ্যে ৪১০ কোটি টাকার প্রি-অনুমোদন হয়ে গেছে। সামনে অর্থ বছরেই আশা করছি একনেকে ফাইনাল অনুমোদন হয়ে যাবে। এছাড়াও টোটাল ১ হাজার কোটির টাকার কাজ হবে শুধু মুজিবনগর কমপ্লেক্সেই।
তারপরও যারা প্রথমবার মুজিবনগরে এসেছেন, এর অবকাঠামো ও সৌন্দর্য দেখে মগ্ধ হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে নানাবাড়ি ঈদ করতে এসেছেন শাহীন। তিনি মুজিবনগরে বেড়াতে এসেছেন। তিনি বললেন, শুনেছি ঐতিহাসিক মুজিবনগরের কথা। আজ চোখে দেখলাম। মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু সেসময়ের পাকিস্তানি সমর্থকরা যে নির্যাতন করেছে নিরীহ বাঙালীদের ওপর সে চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে ভাস্কর্যের মাধ্যমে। ভালো লাগলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পেরে।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় ও আনন্দদায়ক ভ্রমন নিশ্চিত করতে কাজ করছে মুজিবনগর থানা ও উপজেলা প্রশাসন। থানার ওসি মেহেদি রাসেল জানান, প্রায় প্রতিবারই মুজিবনগরে সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে দর্শনার্থীদের প্রান হারানোর ঘটনা ঘটে। তবে এবার আমাদের পুলিশ রাস্তায় শৃঙ্খলা আনার জন্য ব্যাপক পরিশ্রম করছে। দর্শনার্থীদের সচেতন কারার জন্য মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেক পোষ্ট বসানো হয়েছে। সাদা পোশাবেও কপ্লেক্সের ভিতর পুলিশের নজরদারি আছে। এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন ৬৩ জন আনসার সদস্য ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা।